Search This Blog

Tuesday, May 15, 2018

গ্রন্থাগারিকতা কাকে বলে? গ্রন্থাগারিকতার মূলনীতি কি?


 ভূমিকা: প্রচীনকাল থেকে গ্রন্থাগার একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিগনিত। মানুষ নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য বিশৃঙ্খল জীবন পরিহার করে সমাজবদ্ধভাবে বসবাস শুরু করে। তখন থেকেই সমাজের প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান রুপে গ্রন্থাগারের জন্ম। আর এই গ্রন্থাগারের সার্বিক কার্যক্রমকে বাস্তবে রূপদান করার জন্য যারা পেশাগত শিক্ষা ও দক্ষতা গ্রহণ করে তাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে ব্যবহারকারীকে সেবা প্রদান করে থাকেন সেটাই গ্রন্থগারিকতা।

**গ্রন্থাগারিকতা:
সাধারনত যেখানে জ্ঞান সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রয়োজন অনুযায়ী বিতরণ করা হয় তাকে গ্রন্থাগার বলা হয়। এই গ্রন্থাগারে জ্ঞান সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণ করার জন্য জনবলের প্রয়োজন হয়।  আর যারা এই কাজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে সেটাই গ্রন্থাগারিকতা। গ্রন্থাগারে আগত সকল ব্যবহারকারী যে সমস্ত প্রশ্ন নিয়ে আসেন, তার সঠিক উত্তর অল্প সময়ের মধ্যে যিনি দিতে পারেন সহজ কথায় তাকেই গ্রন্থাগারিক বলা হয়। অর্থাৎ পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য সামগ্রীর সংস্থান করা, সংগ্রহ করা, প্রক্রিয়াকরণ ও সেবা দেওয়ার সাথে এবং গ্রন্থাগারের সার্বিক ব্যবস্থাপনার সাথে যিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকেন তাকেই গ্রন্থাগারিক বলা হয়। গ্রন্থাগারে আগত ব্যবহারকারী যে প্রশ্ন নিয়ে আসেন গ্রন্থাগারিক অতি অল্প সময়ের মধ্যে তার সঠিক উত্তর দেন। আর গ্রন্থাগারিকের পেশাই হচ্ছে গ্রন্থাগারিকতা।

**গ্রন্থাগারিকতার মূলনীতিসমূহ:

গ্রন্থাগারিকতার মূলনীতি সঠিক পাঠককে সঠিক সময়ে সঠিক সেবা প্রদানের উপর প্রতিষ্ঠিত। গ্রন্থাগারিকতার কেন্দ্রে আছে মানবসেবা। গ্রন্থাগার বিজ্ঞানী চ. ঝযধপযধভ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২৮ টি জাতীয় পর্যায়ের গ্রন্থাগার সমিতির মূলনীতিকে বিশ্লেষণ করে গ্রন্থাগারিকতার কিছু মূলনীতি চিহ্নিত করেছেন। নি¤েœ সেগুলো আলোচনা করা হলো-

১। গোপনীয়তা ও একান্ততা: গ্রন্থাগারিকগণ গাঠকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও একান্ততাকে সম্মান করবেন। এমনভাবে গ্রন্থাগার বা তথ্যসেবা প্রদান কারবেন না যা মানুষের মৌলিক অধিকার ভঙ্গ বা বিঘিœত করে।

২। সততা: গ্রন্থাগারিকতা পেশার ভিত্তিমূলে আছে সততার সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ। মানুষের তথ্য চাহিদা পূরণের কাছেগ্রন্থাগারিক কোন অবস্থাতেই অসৎ পন্থার আশ্রয় গ্রহণ করবেন না।

৩। নির্ভুলতা: গ্রন্থাগারিক যে কোন বৈধ তথ্য চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নির্ভুল ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রদান করবেন। জেনে শুনে ভূল বা বিকৃত তথ্য প্রদান গ্রন্থাগারিকতার সুমহান আদর্শের পরিপন্থি।

৪। তথ্য বিনামূল্যে ও সমান প্রবেশাধিকার: জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার আছে। গ্রন্থাগারিকের কাজ হচ্ছে এই অধিকার যাতে লঙ্ঘিত না হয় সেটা নিশ্চিত করা। তথ্যে সব মানুষের অধিকার মৌলিক মানবাধিকার।

৫। স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি: গ্রন্থাগারিক কখনোই নিজে স্বার্থকে পাঠকের স্বার্থের উধ্বে কখনোই স্থান দেবে না। যে সব ক্ষেত্রে পাঠকের স্বার্থের সাথে গ্রন্থাগারিকের ব্যক্তিস্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে সেসব ক্ষেত্রে তিনি সর্বোচ্চ সততার পরিচয় দেবেন।

৬। বুদ্ধির মুক্তি: গ্রন্থাগারিকের অন্যতম নৈতিক কর্তব্য হচ্চে বুদ্ধি ও চিন্তাচেতনার স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখা। মানুষ নিজের স্বাধীন ইচ্ছা অনুসারে মত প্রকাশ ও মেধা প্রয়োগের স্বাধীনতা ধারণ করে। গ্রন্থাগারিক এই স্বাধীনতাকে সর্ব অবস্থায় সমর্থন করবেন।

৭। সর্বোচ্চ মানের সেবা: গ্রন্থাগারিকতা একটি সেবাধর্মী পেশা। এ কারণে গ্রন্থাগারিক তাঁর সকল পাঠককে সর্বোচ্চ মানের সেবা প্রদানে অঙ্গিকারবদ্ধ থাকবেন।

৮। গ্রন্থাগারসমূহের মধ্যে সহযোগীতা: সব ধরনের গ্রন্থাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত গ্রন্তাগারিকরা নিজেদের মধ্যে সহযোগীতা বজায় রাখবেন। ফলে সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে পাঠককে সেবা প্রদান সম্ভব হবে।

৯। গ্রন্থাগার সম্পদ উন্নয়ন:গ্রন্থাগারিক তাঁর মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রয়োগ ঘটিয়ে গ্রন্থাগারের তথ্য সম্পদের উন্নয়ন ঘটাবেন। এই কাজে পাঠকের প্রয়োজন ও উচ্চ নৈতিক আদর্শ অনুযায়ী তিনি পরিচালিত হবেন।

১০। মেধাস্বত্ত্ব: গ্রন্থাগারিক মেধাস্বত্ত্বকে সম্মান করবেন। তাঁর কাজের দ্বারা যাতে মানুষের মেধা ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্বত্ত্ব ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে তিনি সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন।

১১। পেশার প্রতি দায়িত্বশীলতা: গ্রন্থাগারিকতা একটি মহান পেশা। এই পেশায় মানুষের বৈধ ও নীতি সম্মত তথ্য চাহিদা পুরণই প্রধান লক্ষ্য। গ্রন্থাগারিক সর্ব অবস্থায় নিজের পেশার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবেন।

১২। অন্যান্য পেশা ও সংগঠনের প্রতি দায়িত্বশীলতা: গ্রন্থাগার সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ন সংগঠন। উত্তম সেবা দানের প্রয়োজনে এই সংগঠনকে অন্যান্য পেশা ও সংগঠনের উপর নির্ভর করতে হয়। গ্রন্থাগারিক তাই অন্যান্য পেশা ও সংগঠনের প্রতি দায়িত্বশীল হবেন।

১৩। সহকর্মীদের প্রতি দায়িত্বশীলতা: গ্রন্থাগারিক নিজ পেশার অন্যান্য কর্মীদের প্রতিও দায়িত্বশীল হবেন। যাতে তাঁর আচারণ ও কর্মকান্ডের কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ বা নিজ দায়িত্ব পালনের অপারগ না হয়।

১৪। পেশাগত উন্নতি: নানা রকম উদ্ভাবনী কলাকৌশল গ্রহণ এবং পঠন-পাঠন ও গবেষণার মাধ্যমে গ্রন্থাগারিক নিজের পেশাগত উন্নয়নের জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন।

১৫। সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা: গ্রন্থাগার এই সমাজের একটি দায়িত্বশীল সংগঠন। এ কারণে সমাজের নাগরিক ও সামাজিক সংহতির প্রতি গ্রন্থাগারিক অবশ্যই নিজ দায়িত্ব পালন করবেন।  

            পরিশেষে বলতে পারি যে, গ্রন্থাগার, গ্রন্থাগারিকতা ও গ্রন্থাগার বিজ্ঞান একটি অপরটির সাথে সম্পর্কযুক্ত। যে দেশের গ্রন্থাগার যত বেশি উন্নত সে দেশ তত বেশি তথ্য সম্পদশালী। গ্রন্থাগারে যে ব্যাক্তি পাঠকদের কাঙ্খিত ও সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করে তাকেই গ্রন্থাগারিক বলে। আর গ্রন্থাগারিকের এই পেশাকে গ্রন্থাগারিকতা বলে। আর গ্রন্থাগারিকতা অনেক গুলো নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।  উপরোক্ত আলোচনার নীতি গুলোই গ্রন্থাগারিকতার মূলনীতিসমূহ।

10 comments:


  1. ধন্যবাদ, অনেক কিছু শিখলাম।

    ReplyDelete
  2. ২০২১-২০২২ সালের সাজেশন দিন ভাইয়া ৷

    ReplyDelete
  3. ভাইয়া আমার গ্রন্থাগারিকতার নৈতিকতা এই প্রশ্নের উত্তরটা লাগতো।

    ReplyDelete
  4. অনেক কিছু শিখলাম।ধন্যবাদ,

    ReplyDelete