এই বছর থেকেই অষ্টম শ্রেণির তথা জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) ও জেডিসিতে (জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট) ২০০ নম্বরের পরীক্ষা তুলে দেওয়া হবে। এর মধ্যে বাংলা ও ইংরেজি দুটি বিষয়ে ৫০ নম্বর করে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা কমবে। আর ঐচ্ছিক বিষয়ের (গার্হস্থ অর্থনীতি/কৃষি) পরীক্ষা তুলে দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষার চাপ কমাতে গতকাল মঙ্গলবার আন্তঃশিক্ষাবোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক উপকমিটির সভায় এসব প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে আগামী ১ নভেম্বর (সম্ভাব্য) থেকে শুরু হতে যাওয়া অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা ৬৫০ নম্বরের হবে।
আজ দুপুরে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সভাকক্ষে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক উপকমিটির সভা হয়েছে। সভায় সব বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি ছিলেন আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক।
সভার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক আজকালের খবরকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষার চাপ কমাতে বাংলা ও ইরেজি বিষয়ে ৫০ নম্বর করে কমাতে এবং চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা তুলে দিতে সবাই একমত হয়েছেন। মন্ত্রণালয় আমাদের প্রস্তাব অনুমোদন দিলে চলতি বছরের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা থেকে তা কার্যকর হবে।’
সভা সূত্রে জানা গেছে, সাতটি বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা। আর বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের দুই পত্রের ১৫০ নম্বরের পরিবর্তে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। গার্হস্থ অর্থনীতি বা কৃষি দুটি বিষয়ের একটি শিক্ষার্থী নিজেদের পছন্দমতো নিতে পারতেন। এবার থেকে এ বিষয়ের পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থাৎ ২০০ নম্বরের পরীক্ষা তুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়া ২০০ নম্বর শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়ন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জিপিএ নির্ধারণের ক্ষেত্রে এর কোনো প্রভাব থাকবে না। সভার সিদ্ধান্তটি গতকালই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত বছর জেএসসি ও জেডিসিতে ১৩টি বিষয়ের মধ্যে তিনটি বিষয়ের ওপর পরীক্ষা তুলে দেওয়া হয়। বিষয়গুলো হচ্ছে- চারু ও কারুকলা, শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এবং কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা। এই তিনটি বিষয়ে ৫০ নম্বর গত বছর থেকে শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হচ্ছে।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় ১০টি বিষয়ে মোট ৮৫০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়েছে। এর মধ্যে বাংলা প্রথমপত্র ১০০; দ্বিতীয়পত্র ৫০; ইংরেজি প্রথমপত্র ১০০; দ্বিতীয়পত্র ৫০; গণিত এবং বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং ধর্ম, গার্হস্থ অর্থনীতি/কৃষি বিষয়ে ১০০ করে ৮০০ নম্বর এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে ৫০ নম্বরসহ মোট ৮৫০ নম্বরের পরীক্ষা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিতে ২০১৬ সালে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যদের নিয়ে ওই বছরের ২৫ ও ২৬ নভেম্বর কক্সবাজারে দুই দিনের আবাসিক কর্মশালার আয়োজন করে মন্ত্রণালয়। এতে শিক্ষাবিদরা বেশকিছু সুপারিশ করেন। সুপারিশ বাস্তবায়নে কয়েকটি সাবকমিটিও গঠন করা হয়। সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে গত ৩০ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ে একটি বর্ধিতসভা হয়। সভায় শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা সাবকমিটি অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় চারু ও কারুকলা, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, কৃষি, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, শরীরচর্চা ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়ভিত্তিক মূল্যায়নসহ বেশকিছু সুপারিশ করেন। মূলত শিক্ষাবিদদের সুপারিশের আলোকেই বোর্ডগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
@Copyright : দৈনিক আজকালের খবর
No comments:
Post a Comment