Search This Blog

Wednesday, June 6, 2018

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা।



গ্রন্থাগার সমাজ উন্নয়নের বাহন। একটি জাতির মেধা, মনন, ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারণ ও লালনপালনকারী হিসেবে গ্রন্থাগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সর্বসাধারণের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রন্থাগারের সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রয়েছে। তাই গ্রন্থাগারকে বলা হয় ‘জনগণের বিশ্ববিদ্যালয়’। ইংরেজিতে একটি কথা আছে - Education is the backbone of a nation. মেরুদন্ড ছাড়া যেমন কোন মানুষ চলতে পারে না, তদ্রুপ শিক্ষা ব্যতীত কোন জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট যে শিক্ষা তা হল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। আর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সফলতার সহায়ক ও গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হল গ্রন্থাগার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের হৃৎপিন্ড বলে অভিহিত করা হয়।

সভ্যতা ও সংস্কৃতির আদিগন্ত পর্যালোচনা করলে লক্ষ্য করা যায়, মানুষ প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছে তার অনুভূতি, ভাবনা-চিন্তা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য লিপিবদ্ধ করে রাখতে। আর এই লিপিবদ্ধ করে রাখার উদ্দেশ্য হলো যোগাযোগের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে মানুষের, সমাজের সঙ্গে সমাজের, অতীতের সঙ্গে বর্তমানের ভবিষ্যতের নিবিড় যোগসূত্র স্থাপন করা। সভ্যতার আদি থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত হাজার হাজার বছর ধরে কালের প্রবহমান ধারায় মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্রমবিকাশের বিচিত্র ও সমৃদ্ধি গতিপথে বহু পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। মানুষের পাঠ-চাহিদা মিটানোর জন্য বিচিত্র উপাদান সংগ্রহ, সংগঠন ও সংরক্ষণের এ মহান কাজটি সম্পাদন করার তাগিদেই প্রয়োজন হয়েছে গ্রন্থাগারের।

গ্রন্থাগার সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথার্থই বলেছেন: "মহাসমুদ্রের শত বৎসরের কল্লোল কেহ যদি এমন করিয়া বাঁধিয়া রাখিতে পারিত যে, ঘুমন্ত শিশুটির মতো চুপ করিয়া থাকিত, তবে সেই নীরব মহাশব্দের সহিত এই লাইব্রেরির তুলনা হইত।" সারা বিশ্বের মনীষীদের চিন্তার সঙ্গে মহামিলনের পবিত্র স্থান গ্রন্থাগার। টুপার বলেছিলেন, "বই হলো আমাদের বর্তমান ও চিরদিনের পরম বন্ধু। আর এই বন্ধুর সঙ্গে সখ্য গড়তে হলে যেতে হবে লাইব্রেরিতে।" কারণ বইয়ের নির্ভরশীল আশ্রয়স্থল হচ্ছে লাইব্রেরি। জ্ঞানের তকমায় পূর্ণতা লাভে লাইব্রেরির গুরুত্ব অপরিসীম। সৈয়দ মোস্তফা আলীর বইকেনা প্রবন্ধে বলেছেন, "বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না।"

মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিক জীব। বুদ্ধি ও মননের অনুশীলনের প্রয়োজনে মানুষ জ্ঞান আহরণ করে। এই জ্ঞান আহরণের দুটো উপায়। একটি দেশভ্রমণ, অন্যটি গ্রন্থপাঠ। দেশভ্রমণ ব্যয়সাপেক্ষ তাই সবার জন্য সম্ভব নয়। সে তুলনায় জ্ঞান আহরণের জন্য গ্রন্থপাঠ প্রকৃষ্টতম উপায়। কিন্তু জ্ঞানভান্ডারের বিচিত্র সমারোহ একজীবনে সংগ্রহ করা ও পাঠ করা সম্ভব হয় না। এই অসাধ্য সাধন কিছুটা হলেও সম্ভব হয় গ্রন্থাগারের মাধ্যমে।  গ্রন্থাগারের বিশাল সংগ্রহশালায় নিজের রুচি, মনন ও প্রয়োজনীয় গ্রন্থ পাওয়া যায়। এই কারণে জ্ঞানার্জনের জন্য গ্রন্থাগার ব্যবহার অত্যন্ত প্রয়োজন।

মানুষের দেহের পুষ্টি জোগায় খাদ্য, আর বই জোগায় মনের খাদ্য। তাই ‘বই’ সভ্য মানুষের নিত্যসঙ্গী। জ্ঞানের বহিঃ প্রকাশ হচ্ছে গ্রন্থ। লেখক লেখেন, প্রকাশক ছাপেন, বিক্রেতা বই বিক্রি করেন আর গ্রন্থাগারিক তা সংগ্রহ করে যথাযথ বিন্যাস করেন এবং পাঠক সমাজ ঐসব উপাদান থেকে মনের খোরাক এবং জ্ঞানলাভে সমর্থ হন।

কম লেখাপড়া জানা ও গরিব মানুষের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে গ্রন্থাগার যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন  করে, তেমনি জ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও গ্রন্থাগারের ভূমিকা অভাবনীয়। গ্রন্থাগারে থাকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিচিত্র বিষয়ের গ্রন্থ। আগ্রহী পাঠকের জন্যে গ্রন্থাগার জ্ঞানার্জনের যে সুযোগ করে দেয়, সে সুযোগ অন্য কোথাও নেই। গ্রন্থাগার গ্রন্থের বিশাল সংগ্রহশালা, যা মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম। গ্রন্থাগারের মাধ্যমে মানুষ জ্ঞানসমুদ্রে অবগাহন করে জ্ঞানের মণিমুক্তা সংগ্রহের সুযোগ পায়। গ্রন্থাগারের আয়োজন সর্বসাধারণের জন্যে অবারিত। চিন্তাশীল মানুষের কাছে গ্রন্থাগারের উপযোগিতা অনেক বেশি।

গ্রন্থাগার জ্ঞান আহরণের সহজ মাধ্যম। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে গ্রন্থাগারের উপযোগিতা উন্নত দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। কারণ মৌলিক চাহিদা মেটাতেই আমরা হিমশিম খাই। তাই আমাদের পক্ষে বই কিনে পড়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক প্রতিদিনের টিফিন-পিরিয়ড বা অন্য অবসর সময়টা আড্ডা ও গল্প-গুজবের মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দেয়। কিন্তু একটা লাইব্রেরি থাকলে ছাত্র-শিক্ষক তাদের প্রতিদিনের অবসর সময়টা পড়ালেখায় কাটাতে পারেন। গণতন্ত্রের সাফল্যে গ্রন্থাগারের ভূমিকা গণমাধ্যমের চেয়ে কম নয়। আধুনিক বিশ্বে গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা দিনে দিনে বাড়ছে। গ্রন্থাগার সকলের জন্য উন্মুক্ত।

প্রমথ চৌধুরী যথার্থই বলেছেন, ‘আমরা যত বেশি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করব, দেশের তত বেশি উপকার হবে। আমার মনে হয়, এদেশে লাইব্রেরির সার্থকতা হাসপাতালের চাইতে কিছু কম নয় এবং স্কুল-কলেজের চাইতে একটু বেশি।’  লাইব্রেরি হচ্ছে এক রকম মনের হাসপাতাল। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য আমাদের মৌলিক চাহিদাসমূহের দুটি। কাজেই আমাদের দেশে হাসপাতালের সঙ্গে সঙ্গে গ্রন্থাগারও স্থাপন করতে হবে। ল্যাটিন শব্দ লিবার (Liber) থেকে লিবরারিয়াম (Libraium) থেকে ইংরেজি (Library) শব্দের উৎপত্তি। ইংরেজি Library-কে বাংলায় গ্রন্থাগার নামে অভিহিত করা হয়। গ্রন্থ মানে বই, আগার মানে গৃহ অর্থাৎ বই রাখার গৃহকে গ্রন্থাগার বলা হয়।

লেখক জাকারিয়া শেখ, এমএসএস, তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা।

তথ্যসূত্র:
১. ড. মোঃ মিজানুর রহমান, গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান পরিচিতি-১, ঢাকা: নিউ প্রগতি প্রকাশনী, ২০১৫, ৪৬১ পৃষ্ঠা।

10 comments:

  1. অনেক সুন্দর লেখা স্যার

    ReplyDelete
  2. খুব ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ আপনাকে

    ReplyDelete
  3. খুব সুন্দর লিখা কিন্তু লে-আউট বা পেজ কালারটি চোখের জন্য বিরক্তিকর মনে হচ্ছে।চেঞ্জ করলে ভালো হয়

    ReplyDelete
  4. আবেদন পত্র

    ReplyDelete
  5. pagel Naki ato pore k bhai

    ReplyDelete